Breaking News
recent

শীতে ত্বক থাক যত্নে

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে ফিরে এল শীতের আমেজ। হিম হিম ঠান্ডা হাওয়ার দাপটে এই সময় ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক, টানটান। শীতের দাপুটে বাতাস, ধুলাবালু, ঠান্ডা, কাশি আর শীতপোশাক নিয়ে টালমাটাল সময়ে আর ব্যস্ত জীবনে ত্বকের দিকে খেয়াল রাখা হয় কমই। আর এ সুযোগেই আমাদের ত্বকের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। তাই এ সময় ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়া রোধ করতে চাইলে দরকার একটু বাড়তি যত্নের। নিয়মিত যত্নে শীতেও ত্বক থাকবে মসৃণ, ঝলমলে, দ্যুতি ছড়ানো স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ত্বকের ধরন অনুসারে ত্বক পরিচর্যার কিছু উপায়।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন: যাঁদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে তেলমুক্ত (অয়েল ফ্রি) পণ্য ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুসপাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে টমেটোর রস খুব ভালো কাজ করে। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন: শুষ্ক ত্বক শীতে আরও বেশি রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ধরনের ত্বকের জন্য ভিটামিন ই তেল আধা চামচ আর আধা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ জলপাই তেল ও পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
মিশ্র ত্বকের যত্ন: প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে মিশ্র ত্বকের অধিকারীদের। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সেদ্ধ করা মিষ্টিকুমড়া চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণমতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের যত্ন

মৃদু ফেইস ওয়াশ ও সাবান ব্যবহার: শক্তিশালী ফেইসওয়াশ ও সাবান ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেয়। এতে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মৃদু ‘বডি’ ও ‘ফেইস ওয়াশ’ ব্যবহার করুন।
ত্বক পরিষ্কার করার পরপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: ত্বক পরিষ্কার করা বা গোসলের ঠিক পরেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় গ্লিসারিন ও শিয়া বাটার যুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা ভালো।
এক্সফলিয়েট বাদ দেওয়া যাবে না: সপ্তাহে অন্তত একবার ত্বক এক্সফলিয়েট করতে ভুলবেন না। ত্বকের পক্ষে কোমল ও আর্দ্রতা রক্ষা করে এমন স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এটা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং সহজেই ত্বকে শোষিত হয়।
সিরাম ব্যবহার: মুখের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক হলে, আর্দ্রতা রক্ষাকারী সিরাম ব্যবহার করুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার করুন। এতে ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ হবে। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন।
রাতে ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: মুখ থেকে শুরু করে সারা শরীর যদি শুষ্ক ও খসখসে মনে হয় তাহলে রাতে অবশ্যই ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ‘নন-কমেডোজেনিক’ উপাদান সমৃদ্ধ যেমন- হ্যালোরোনিক ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটা ত্বক চিটচিটে না করে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

শীতকালে আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও আলোকিত রাখার জন্য খাবারগুলি:

গাজর: গাজর ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উত্স, একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা আপনার দেহের কোলাজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, এটি এমন একটি প্রোটিন যা আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
বিটরুট: (বিটা ওয়ালগারিস) একটি মূল উদ্ভিজ্জ যা লাল বীট, টেবিল বীট, বাগানের বীট বা কেবল বীট নামে পরিচিত। প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর, বিটরুটগুলি ফাইবার, ফোলেট (ভিটামিন বি 9), ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি এর দুর্দান্ত উৎস।
জলপাই তেল: জলপাই তেলটি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, এটি আপনার মুখ এবং শরীরের ময়েশ্চারাইজার বা আপনার মুখের প্যাকগুলির জন্য ভিত্তি হতে পারে। এটি রান্নাতেও ব্যাহার করতে পারেন।
কলাঃ কলা ভিটামিন সি ও বি-সিক্স’য়ের ভালো উৎস যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ফল ত্বক প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র রাখতে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
পালংশাক: চামড়া ওঠার সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ই’য়ের ঘাটতি রয়েছে। সবুজ, পাতাবহুল সবজি যেমন পালংয়ে প্রচুর ভিটামিন এ’ থাকে যা শুষ্ক ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
টমেটো: সূর্যের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টমেটো সাহায্য করে। ব্রিটিশ সোসাইটি ফোর ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি’র গবেষণা থেকে জানা যায় টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপেনে ত্বক সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফল ত্বকের বলিরেখা পড়ার গতি ধীর করতে অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে কাজ করে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কমলা খায় তাদের তুলনামূলক কম বলিরেখা পড়ে।
চিয়া বীজ: এটা ওমেগা-সিক্স সমৃদ্ধ যা বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বক পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
এছড়া মধু, সবুজপত্রবিশিস্ট শাকসবজি, পেঁপে, বাদাম, কফি, সবুজ চা ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব নিয়মিত খেলে আপনার শুষ্ক ও মলিন ত্বক করবে উজ্জ্বল ও মোলায়েম।

No comments:

If you have any doubt, please let me know

Powered by Blogger.