Breaking News
recent

একাধিক সমস্যার অব্যর্থ দাওয়াই, বাজিমাত এই ‘অমৃত’ ফলে

 
আমলকি

              আমলকি

আমলকির গল্প - একটি সংক্ষিপ্ত পটভূমি

আমলকী, যা সাধারণত ভারতীয় গুজবেরি হিসাবে পরিচিত, এটিকে "মা" হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি মন-দেহব্যবস্থার সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়ার কাজ সম্পাদন করে এবং এর অনাক্রম্য পুনরুদ্ধার বৈশিষ্ট্যের কারণে চূড়ান্ত নিরাময়কারী হিসাবে পরিচিত। চরক সংহিতায় - আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞানের অন্যতম মূল গ্রন্থ - চরক বলেছে, “সমস্ত রসায়নের মধ্যে অমলাকী অত্যন্ত শক্তিশালী ও পুষ্টিকর একজন হিসাবে সম্মানিত; নবজীবনকারী গুল্মগুলির মধ্যে আমালাকিই সেরা ” আয়ুর্বেদে রসায়নগুলি চিকিত্সাগুলি পুনরুজ্জীবিত করছে যা অ্যান্টিজেজিং এবং দীর্ঘায়ু সমর্থন করে।

চরক সুশ্রুতের সময়েরও আগে থেকে জানা ছিল খানিক কষাটে মার্বেল গুলির আকারের এই ফলের ম্যাজিকের কথা। সে কালের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা আর বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে এই ফলের রহস্য ভেদ করেছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় হালকা স্বচ্ছ সবুজ রঙের এই ফলটির নামকরণ করা হয় আমলকি, এর শব্দগত অর্থ অমৃত ফল।

 

আমলকি যখন গবেষণার বিষয়

আমলকি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।  প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কাজ করে। কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে কিছু রোগ নিরাময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগ। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে  ডায়াবেটিক রোগীর উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। 

 

               আমলকি

আমলকিতে থাকা  বিদ্যমান উপাদান

আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে (৪৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম) । তা সত্ত্বেও আরো অন্যান্য উপাদান নিয়ে মতভেদ আছে এবং আমলকির 'এন্টি-অক্সিডেন্ট'রূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা ভিটামিন-সি এর নয়, বরং 'এলাজিটানিন' নামক পদার্থসমূহের বলে মনে করা হয়।  যেমন এমব্লিকানিন-এ (৩৭%), এমব্লিকানিন-বি (৩৩%), পানিগ্লুকোনিন (১২%) এবং পেডাংকুলাগিন (১৪%).এতে আরো আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ।  এই ফলে অন্যান্য 'পলিফেনল'ও থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড।

 

ঔষধি গুণ

১) আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।

২) বমি বন্ধে কাজ করে।

৩) দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।

৪) এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।

৫) এটি দাঁত, চুল ও ত্বক ভাল রাখে

৬) এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়।

৭) কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।

৮) বহুমূত্র রোগে এটি উপকারী।

৯) চোখ উঠলে কাঁচা আমলকীর রস দিনে ২ ফোটা করে দুই বার দিলে ভাল আরাম পাওয়া যায়।

১০) চুল ওঠা দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী।

১১) চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।

 

ক্যান্সার

i) আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

ii) প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।

iii) আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।

iv) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

 

ত্বকের কালচে ভাব উধাও করে মুখ উজ্জ্বল করতে

মুখ উজ্জ্বল করা-সহ সারা শরীরে ত্বক ঝকঝকে রাখতে ভিটামিন সি ক্রিম দারুণ উপযোগী। হাজার হাজার টাকা দিয়ে নামী কোম্পানির ভিটামিন সি ক্রিমের পরিবর্তে আমলকি থেঁতো করে সেই রস মুখে গলায় হাতে মেখে নিন। কিছু ক্ষণ রেখে ধুয়ে নিলেই ত্বকের কালচে ভাব উধাও হয়ে যাবে। পর পর কয়েকদিন এই নিয়ম মানলে রোদে পোড়া সংবেদনশীল ত্বক ঝক ঝক করবে।

আমলকি শুকিয়ে গুঁড়ো করে যে জল বা মুলতানি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে, গলায় হাতে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

 

কাঁচা আমলকী


ব্রণের দাগ দূর করতে: আমলকী প্রাকৃতিকভাবেই ব্রণ ও অন্যান্য দাগ দূর করতে পারে। আমলকীর রস মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সংবেদনশীল ত্বক হলে আমলকীর রসের সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

মৃতকোষ দূর করে: আমলকীর রস মুখের স্ক্রাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের রংয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে, ত্বক টানটান ও মসৃণ করে।

এক চামচ আমলকীর গুঁড়ার সঙ্গে গরম পানি মেশান। এর সাহায্যে মুখ স্ক্রাব করুন। পাঁচ মিনিট পরে ধুয়ে নিন। চাইলে এতে সামান্য হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন।  
 
 

চুল পড়া কমায়: আমলকী চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। শুকনা আমলকীর গুঁড়া পানিটে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে ওঠা শুরু করলে তা ভালোভাবে নেড়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটা চুল ও মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন।

সপ্তাহে একবার ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে। আমলকীর রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে তা আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন, নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বাড়বে। চুল পড়া কমাতে ও রুক্ষতা কমাতে নিয়মিত আমলকীর তেল ব্যবহার করুন। এটা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

 

               আমলকির তেল 


খুশকির সমস্যা সারিয়ে তোলে

অনেকেই নাছোড়বান্দা খুশকির সমস্যায় ভোগেন। কালো পোশাক তো দূরের কথা যে কোনও ঘন রঙের পোশাক পড়াই যেন লজ্জার। কাঁধে আর ঘাড়ে খুশকির সাদা খোলসে ভর্তি হয়ে যায়। অ্যান্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যর্থ। এই সমস্যা দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় আমলকি। আমলকির ভিটামিন সি প্রদাহ ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি শুষ্ক স্ক্যাল্পকে আর্দ্র করে খুশকির সমস্যা সারিয়ে তোলে।

চুল লম্বা করতে

চুল লম্বায় বাড়তে সাহায্য করে আমলকির ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন সি স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুল লম্বা হতে এবং ঘন হতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। কারণ আমলকির ফা্ইটোনিউট্রিয়েন্টস চুলের কোলাজেন নামে এক বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে।

চুলে পাক ধরা রোধ করতে 

দূষণের কারণে অনেকেরই অল্প বয়সে চুলে পাক ধরে। চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে আমলকি অত্যন্ত উপযোগী। কাঁচা আমলকি বেটে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে রেখে আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললে চুলে পাক ধরবে না।

আমলকি ত্বকের প্রিয়তম বন্ধু। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ব্রণ, মেচেতার দাগ মুছে ফেলার পাশাপাশি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। দূষিত পরিবেশে ত্বক ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। নিয়মিত আমলকি ব্যবহারে নিষ্প্রাণ ত্বক, চুল, সবমিলিয়ে গোটা চেহারা সজীব হয়ে ওঠে সুতরাং সঙ্গী করুন আমলকিকে।

No comments:

If you have any doubt, please let me know

Powered by Blogger.